<![CDATA[কল্প]]>kalpa21.github.io//kalpa21.github.io//favicon.pngকল্পkalpa21.github.io//Ghost 3.42Sun, 21 Mar 2021 14:46:11 GMT60<![CDATA[দ্য বেটার ম্যান]]>kalpa21.github.io//the-better-man/605705dd38fbea048bf208a7Sun, 21 Mar 2021 04:00:00 GMTদ্য বেটার ম্যান

দ্য বেটার ম্যান

   সে সুন্দরী, কমনীয় আর চমৎকার, তবে সে এর কোনোটি না হলেও তা গুরত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ণ হলো সে একটি মেয়ে। বস্তুত খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কেননা তাকে বলা হচ্ছে শেষ মানবী।
   সেকারণে, সে পৃথিবীর ভরসা, এমন পুরস্কার যার জন্য যুদ্ধ করা যায়। তার দুই দাবিদার– নিজ লিঙ্গের শেষ লোক– নিজস্ব পৃথিবীর গোধূলীতে দাঁড়িয়ে আছে, আমৃত্যু যুদ্ধ করতে প্রস্তুত। বিজেতা হবে নতুন আদম, ছাই আর পাথরের স্বর্গে।
   “তোমাদের অস্ত্র নামাও,” মেয়েটি বললো। “যথেষ্ট হানাহানি হয়েছে। তোমাদের মধ্যে কে সেরা মানব তা আমরা যুক্তি দিয়ে বিচার করবো।”
   “আমার নাম ‘জন’,” খোঁড়া আর টাক লোকটি বললো, “আর আমিই সেরা মানব। এটা সত্যি যে আমার দৃষ্টিশক্তি আগের মত নেই, আমি এক কানে শুনি না, দিনে দিনে আমার এই কাশি এসে জুড়েছে, আমার দাঁতগুলো নকল, আর রেডিয়েশনের দরুন আমার জিন কতটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তা নিশ্চিত ভাবে বলতে পারছি না, তবে আমি শিক্ষিত, কাজে দক্ষ, আর আশা করি, বয়সের অভিজ্ঞতায় আমি বিজ্ঞ।
   “তোমাকে ধন্যবাদ, জন,” মেয়েটি মিষ্টি করে বললো। “আর তুমি, যুবক?”
   “আমার নাম ‘নয়’,” অপরজন বললো, যে লম্বা আর সুদর্শন, “আর আমি কোন মানুষ না। আমার পুরো নাম ‘নয় চার ছয় তিন সাত, দশমিক, শূন্য শূন্য পাঁচ দুই আট’। আমি একটা অ্যানড্রয়েড। তবে আমি সেরা মানব।”
   জন হেসে উঠলো। “সেরা মানব! একটা প্লাস্টিক হাড্ডি, কেমিক্যাল রক্ত, আর কৃত্তিম মাংসের পিন্ড? হাস্যকর!”
   মেয়েটি জিজ্ঞেস করলো, “তুমি কেন নিজেকে সেরা মানব দাবি করছো, নয়?”
   নয় গলা পরিষ্কার করলো, “আমি তোমাকে রোবোট আর অ্যানড্রয়েডের ইতিহাস বলে বিরক্ত করবো না,” সে বলতে শুরু করলো।
   “দয়া করে থামো,” জন বাঁধা দিলো।
   “আমি নিশ্চিত যে তোমরা দুজনই জানো,” নয় বলে চললো, “গত কয়েক শতকে অ্যানড্রয়েড উৎপাদনে কতটা উন্নতি হয়েছে?”
   জন শ্রাগ করলো, “চোখ টিভি ক্যামেরার বদলে চোখের মতই কাজ করে।”
   “চুল আর নখও বড় হয়,” মেয়েটি বললো।
   “রেচন তন্ত্রও আমাদের মত,” জন ঘোঁতঘোঁত করলো, আর আঁকুতি করলো, “মাফ করো, মিস।”
   “হাসি,” মেয়েটি বললো। “কান্না।” হাসলো সে।
   নয়ও তাকে হাসি ফিরিয়ে দিলো। “ঠিক বলেছো,” সে বললো। “আমরা যতোই কার্যকরি হয়ে উঠেছি, স্বাভাবত ততোই আমারা মানুষ হয়ে উঠেছি, কারণ মানুষের দেহ আর মস্তিষ্ক এখনো সবচে কার্যকরি যন্ত্র। প্রায় বলতেই পারো, যখন তোমরা মানুষেরা নকল-দাঁত, নাক-বুকের প্লাস্টিক সার্জারির ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছো, রেডিয়েশনে ক্রমাগত বিকৃত আর পরিবর্তিত হয়ে অমানব হয়ে উঠছো, আমরা অ্যানড্রয়েডেরা হয়ে উঠছি আরো মানব। পরিহাসের বিষয়।”
   “খুব,” বললো জন, হাই তোলা থেকে বিরত থাকলো।
   নয় বললো, “ব্যাপারটা হচ্ছে, জন, তুমি বুড়ো আর দুর্বল হয়ে যাচ্ছো। আর আমার এই দেহ– নকল হতে পারে– আরো একশ বা তার বেশি বছর টিকবে, ভালভাবে। আমি তোমার থেকে শক্তিশালী, উপরন্তু, আমার দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি ভাল, সংবেদনশীল, যেসব নতুন পৃথিবী গঠনে অপরিহার্য। তাই তুমি দেখতেই পাচ্ছো,” সে উপসংহার টানতে হাত প্রসারিত করে বললো, “এখানে কোন প্রতিযোগিতাই নেই।” ঠোঁট বাঁকা করে জন বললো, “তুমি একটা ব্যাপার ভুলে যাচ্ছো।”
   “না, ভুলি নি,” বললো নয়। “আমাদের অ্যানড্রয়েডদের সমাবেশ সারি আর ল্যাবরেটরিতে একসাথে রাখা হতো, স্বীকার করছি, তবে এখন আর না। সবাই জানে না, তবে অনেকদিন হলো সস্তায় আর সহজে প্রজননক্ষম অ্যানড্রয়েড উৎপাদিত হচ্ছে। আদপে, কোন এক গোপন ল্যাব পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে, অন্তত তাত্ত্বিকভাবে, আমরাও, আ…, মানুষের সাথে মিলিত হতে পারবো।
   জন ঢোক গিললো আর তোঁতলাতে থাকলো, “কিন্তু সেটাতো– অসভ্যতা, আর– শুনিনি কখনো, আর– মানে সঙ্গী? সন্তান প্রজনন? একজন মানুষ আর একটা অ্যানড্রয়েড? অদ্ভুত!”
   “হ্যাঁ, তাইনা?” জবাব দিলো নয়। “তবে এটা সত্য।”
   তাদের সুন্দরী পুরস্কারখানা বেশ খানিকক্ষণ সুদর্শন, পেশিবহুল নয়কে দেখলো, তারপর ফিরলো সল্পদৃষ্টির, কাশতে থাকা জনের দিকে। “আমি ভয় পাচ্ছি যে ওর কথাই ঠিক, জন,” সে দুঃখের সাথে বললো। “ওই সেরা… মানব।”
   জন দীর্ঘশ্বাস ফেললো, তবে কিছু বললো না। সে আঁকাবাঁকা ছায়ায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগিয়ে চললো। এর কিছুক্ষণ পর একটা গুলির শব্দ শুনতে পেল তারা আর শুনতে পেল একটি নিথর দেহের মাটিতে লুটিয়ে পড়ার শব্দ।
   “বেচারা জন,” মেয়েটি বললো। “ওর জন্য খারাপ লাগছে।”
   “আমারও,” বললো নয়, “তবে এটাই জীবন।” সে তাকে নিয়ে খুপড়ির দিকে এগলো যেখানে ঘর বাঁধবে ওরা। “জানো,” সে বললো, “আমি ভয় পেয়েছিলাম জনের শিক্ষাদীক্ষা, দক্ষতা আর জ্ঞান, ভাগ্যের চাকা ওর দিকে ঘুরিয়ে দিবে…”
   “প্রায় দিয়েছিলো।”
   “হ্যাঁ, আমি জানি। সেজন্যেই আমি অ্যানড্রয়েড বলে ওই ছোট গুলটা মেরেছি। আমার নাম নয় না, আমি ‘বিল’, আর আমি শতভাগ মানুষ।”
   “যেরকমটা আমি ভেবে ছিলাম,” বিজয়গর্বে বললো জন, ছায়া ফুরে বেরিয়ে এসেছে। “শুধু মিথ্যুকই না, বেকুবও। এতটাই বেকুব যে খানিকক্ষণ আগের সাধারণ শব্দেই বোকা বনে গেছে।” জন তাদের প্রতিযোগিতার সুন্দরী বস্তুর দিকে ফিরলো। “এমন সঙ্গী কি তোমার উপযুক্ত, প্রিয়? নীতি বহির্ভূত মানুষ? পেশিতে মোড়া পিন্ড যে কিনা একই সাথে নীতিহীন আর বুদ্ধিহীন? এই কি সেই সেরা মানব?
   মেয়েটি টলে উঠলো, তবে সামান্য সময়ের জন্য। “না, জন। নতুন প্রজন্মের জন্মদাতা একজন সম্মানিত আর বুদ্ধিমান লোকেরই হওয়া উচিৎ। তুমিই সেরা মানব।”
   জন বিলের দিকে ফিরলো। “বিচারক আর সভাসদগণের অনুপস্থিতিতে, আমি নিজ দায়িত্বে তোমার মিথ্যা, অস্বচ্ছতা আর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি অপরাধের দন্ড বিধান করছি। আর সেটা মৃত্যুদন্ড।” জন বিলের মাথায় গুলি করলো, আর ভূপাতিত হলো যুবক দাবিদার, প্রাণহীন।
   “এখন, পত্নী,” বললো জন, উজ্জ্বল চোখে, “আমরা নতুন প্রজন্ম শুরু করতে আর মূল্যবান সময় অপচয় না করি। আমি, স্বীকার করছি, মৃত বিলের মত যুবকও না, সুদর্শনও না, তবে মনে করি তুমি এই বুড়ো বালকের ভেতর এখনো প্রাণ খুঁজে পাবে।”
   “তুমি কি অ্যানড্রয়েড, কোন ভাবে?” মেয়েটি জিজ্ঞেস করলো।
   জন বললো, “এটা আসলে সত্যি যে বিল মানুষ আর অ্যানড্রয়েডের, আ…, মিলনের ব্যাপারে পুরোপুরি নির্ভুল ছিলো। আমি এটা নিয়ে হৈচৈ করেছিলাম শুধু তোমাকে হারাতে চাইনি বলে। এক্ষেত্রে, আসলে, আমি অ্যানড্রয়েড হলেও কিছু বদলাতো না। যাহোক, আমি তোমাকে নিশ্চিত করছি আমি পুরোপুরি মানুষ, যদি এটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়।”
   মেয়েটি সুন্দর করে হাসলো আর তার একটা হাত ধরলো। “চমৎকার,” সে বললো। “যদি এটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, আমি নই।” আর তার বিষ্ময়াভাবকে চুপ করিয়ে দিলো এক প্রশংসনীয় খাঁটি চুমু এঁকে।

]]>
<![CDATA[গাই ওয়াকস ইনটু এ বার]]>kalpa21.github.io//guy-walks-into-a-bar/60538e10eb8d6d13ce23cf56Mon, 15 Mar 2021 14:00:00 GMTগাই ওয়াকস ইনটু এ বার

গাই ওয়াকস ইনটু এ বার

   ওর বয়স উনিশের মত হবে। এর বেশি না। সম্ভবত কমই। কোন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি হয়তো ভেবে নিতো আরো ষাট বছর আয়ু আছে ওর। তবে আমি বুঝতে পারছি, ঠিকভাবে হিসেব করলে আয়ু ছত্রিশ ঘন্টা, অথবা ছত্রিশ মিনিট যদি শুরুতেই ঝামেলা বেঁধে যায়।
   ও স্বর্ণকেশী, নীল-নয়না, তবে আমেরিকান না। বহু প্রজন্ম ধরে প্রাচুর্যের মাঝে বেড়ে উঠার কারণে আমেরিকান মেয়েদের চেহারায় আভা দেখা যায়, থাকে স্নিগ্ধতা। এই মেয়েটা অন্যরকম। ওর উত্তরসূরীরা শঙ্কা আর দুর্দশা কি তা ভালো করে জানতো। উত্তরাধীকারসূত্রে সেগুলো প্রকাশ পাচ্ছে ওর চেহারায়, ওর শরীরে, ওর চলাফেরায়। ওর চোখগুলো সতর্ক। ও রোগা। এটা সেরকম রোগা না যেরকমটা ডায়েট করে আপনি বানাতে পারবেন, এটা ডারউইন তত্ত্বের রোগা, আপনার দাদা-দাদির ভাত-কাপড় না থাকলে, খেয়ে না খেয়ে থাকলে আপনি যেরকম রোগা হবেন সেরকম। ওর চলাফেরা ঠুনকো আর চিন্তিত, একটু সতর্ক, একটু ভীত, তবে ওর চেহারা দেখে মনে হচ্ছে যেন জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় কাটাচ্ছে।
   নিউ ইয়র্কের একটা বারে ও বসে আছে। বিয়ার পান করছে। একটা ব্যান্ডের গান শুনছে, গিটারিস্টের প্রেমে পড়েছে। সেটা পরিষ্কার। ওর দৃষ্টির যেটুকুতে সতর্কতা নেই, সেটুকু জুড়ে আছে প্রশংসা, আর সেটার লক্ষ্য তার দিকে। ও সম্ভবত রাশিয়ান। ধনী। স্টেজের সামনের এক টেবিলে একা বসে আছে। ওর সামনে এটিএম থেকে সদ্য তোলা কড়কড়ে নোট আর ওগুলো থেকে দাম চুকাচ্ছে প্রতিটা নতুন বোতলের, ফেরতের প্রত্যাশা না করে। ওয়েট্রেসদের প্রিয়মুখ ও। ঘরের শেষমাথায় এক লোক চওড়া বেঞ্চে বসে আছে। ওর বডিগার্ড হবে হয়তো। লোকটা লম্বা চওড়া। মাথা কামানো। কালো টি-শার্টের উপরে কালো স্যুট পরে আছে। তার কল্যাণে ও উনিশ কিংবা তার কম হয়েও শহরের কোন বারে বসে বিয়ার পান করতে পারছে। এটা এরকম কোন চকচকে জায়গা না যেখানে অপ্রাপ্তবয়স্ক ধনী মেয়েদের জন্য পলিসি থাকবে, না পক্ষে, না বিপক্ষে। এটা ব্লীকার স্ট্রীটের নোংরা প্রান্ত, হ্যাংলা ছেলেমেয়েদের আস্তানা, পড়ার খরচ জোগানোর ধান্দায় থাকে। বুঝতে পারছি, তারা ওকে আর ওর বডিগার্ডকে খেয়াল করেছে আর তারপর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঝামেলা বাদ দিয়ে উদার বখশিস বাগিয়ে নেওয়ার।
   আমি মিনিট খানেক ওকে দেখে অন্যদিকে ফিরলাম। আমার নাম জ্যাক রীচার। একসময় সামরিক পুলিশ ছিলাম, অনেক আগের কথা। যতোসময় পুলিশে ছিলাম, এখন প্রায় ততোসময় ধরে পুলিশের বাইরে। কিন্তু পুরোনো অভ্যাস সহজে মরে না। আমি বারেও ওরকমই প্রবেশ করেছি যেমনটা সবখানে করে থাকি, সতর্কভাবে। বেলা দেড়টা। ট্রেনে থেকে নামলাম ওয়েস্ট ফোর্থে। সিক্সথ এভিনিউ ধরে দক্ষিণ দিকে হেঁটে হেঁটে ব্লীকারে পৌঁছোলাম, তারপর বামে মোড় নিয়ে থামলাম ফুটপাতে। গান শোনার ইচ্ছে ছিলো, তবে অতি উৎসাহীদের জটলার মধ্যে ঘোল পাঁকিয়ে ন। মানুষের সবচেয়ে ছোট জটলাটা দরজা পর্যন্ত অর্ধেক উড়াল দেওয়া সিঁড়ির পাশে। একটা কালো চকচকে মার্সিডিস সেডান ফুটপাত ঘেঁষে দাঁড়ানো, ড্রাইভার সীটে বসে ছিলো। দেয়ালের কারণে মিউজিক আসছিলো ফিল্টার হয়ে, ভোঁতা শোনাচ্ছিলো। তবে চটপটে বেজ লাইন আর ঝরঝরে ড্রামের বাজনা ঠিকই শুনতে পাচ্ছিলাম। তাই সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেলাম। ভেতরে পা বাড়ালাম পাঁচ ডলার চাঁদা দিয়ে।
   বের হওয়ার দুটো পথ। একটা আমি যে দরজা দিয়ে এলাম, অপরটা পেছনের দিকে অন্ধকার, লম্বা ওয়াশরুম করিডরের শেষ মাথায়। ঘরটা সরু আর নব্বই ফুটের মত গভীর। ভেতরে ঢুকে সামনে বাম পাশে বার, তারপর চওড়া ঘোড়ার খুরের মত বেঞ্চের সারি, তারপর এক থোকা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা টেবিল, আগের রাতে যেগুলোর উপর হয়তো নাচের আসর বসেছিলো। তারপর স্টেজ, যেখানে ব্যান্ড গান করছে।
   ব্যান্ডটাকে দেখে মনে হচ্ছে কোন ট্যালেন্ট এজেন্সীর ফাইল অদল-বদলের দুর্ঘটনায় একসাথে জুড়ে গেছে। বেজিস্ট ভেস্টসহ স্যুট পরা এক মোটাসোটা কৃষ্ণাঙ্গ। নিষ্ঠার সাথে সে বেজের তারে আঙুল চালিয়ে যাচ্ছে। ড্রামার তার চাচা হবে হয়তো। লোকটা বিশালদেহী বুড়ো, ছোটখাটো বাদ্যযন্ত্রটির পেছনে কুঁজো হয়ে আছে। গায়ক হারমোনিকাও বাজাচ্ছে। বয়সে বেজিস্টের থেকে বড় হবে আর ড্রামার থেকে ছোট। তবে দুজনের থেকেই চওড়া। ষাটের মত বয়স, স্বাস্থ্য ভালোই, তবে ছোটাছুটির উপযুক্ত না।
   গিটারিস্ট একদম আলাদা। সে যুবক, শেতাঙ্গ আর ছোটখাটো। বয়স হয়তো বিশ, উচ্চতা হয়তো পাঁচ ফুট ছয়, ওজন হয়তো একশ ত্রিশ পাউন্ড। চকচকে নতুন অ্যামপ্লিফায়ারে জোড়া দেওয়া ঝকঝকে গিটার তার হাতে। সব ইনস্ট্রুমেন্ট আর ইলেক্ট্রনিক্স মিলে জায়গাটায় তীক্ষ্ণ শব্দ সৃষ্ট করে প্রতিধ্বনি তুলছে। মাত্রারিক্ত তীক্ষ্ণ শব্দ। মনে হচ্ছে ঘরের বাতাস যেন শক্ত হয়ে এঁটে আছে। আয়তনের আর একটুকুও অবশিষ্ট নেই।
   তবে মিউজিকটা চমৎকার। কৃষ্ণাঙ্গ তিনজন পেশাদার বুড়ো, আর শেতাঙ্গ ছেলেটাও সঙ্গীতের স্বরলিপি জানে, জানে কখন, কিভাবে, কিরকম বাজাতে হবে। একটা লাল টিশার্ট, কালো প্যান্ট আর একটা সাদা টেনিস শ্যু পরে আছে সে। তার চেহারায় প্রকাশ পাচ্ছে গম্ভীর অভিব্যক্তি। দেখে বিদেশি মনে হচ্ছে তাকে। সম্ভবতও সেও রাশিয়ান।
   গানের প্রথমভাগে পুরো ঘরজুড়ে চোখ বুলিয়ে কাটালাম,  গুনলাম কতজন আছে, চেহারা খুঁটিয়ে দেখলাম, দেহাভঙ্গি বিশ্লেষণ করলাম। পুরোনো অভ্যাস সহজে মরে না। শেষমাথায় টেবিলের নিচে হাত রেখে দুজন লোক বসে আছে। একজন ক্রেতা, আরেকজন বিক্রেতা, স্পষ্টত, লেনদেন হচ্ছে হাত ছুঁয়ে আর নিশ্চিত করছে চোখ টিপে। বারের কর্মচারীরা বরফকেস থেকে নকল বিয়ার বিক্রি করে মালিকের লাল বাত্তি জ্বালিয়ে দিচ্ছে। ঘরের তিনটা থেকে দুইটা বোতল বৈধ, ফ্রীজের তাক থেকে দেওয়া, তিন নাম্বারটা আসছে তাদের নিজস্ব কুলার থেকে। আমি ওরকমই একটা পেলাম। লেবেল ভেজা আর বড়সড় মার্জিন ওয়ালা। আমি বোতলটা হাতে নিয়ে কোনার সীটে গিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসলাম। এই সময়টাতে খেয়াল করলাম মেয়েটা টেবিলে এক বসে আছে আছে, আর ওর বডিগার্ড তার বেঞ্চে। আন্দাজ করলাম বাইরে রাখা মার্সিডিসটা ওদের। আন্দাজ করলাম ওর বাবা দ্বিতীয় সারির কোন মাফিয়া, মিলিওনিয়ার তবে বিলিওনিয়ার না, খেয়ালী মেয়েকে এমন এক এটিএম কার্ড হাতে দিয়ে নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে চার বছরের জন্য ছেড়ে দিয়েছে, যে কার্ডের টাকা ফুরোয় না।
   ঘরের আশি জনের মাঝে দুজন। কোন সমস্যা না।
   যতক্ষণ না আরো দুজন এসে উপস্থিত হলো।
   জোড়ায় এসেছে। লম্বা শেতাঙ্গ যুবকদ্বয়, সস্তা আঁটসাঁট চামড়ার জ্যাকেট, ভোঁতা খুর দিয়ে কামানোর ফলে মাথায় কাটা ছেঁড়া দাগ পড়েছে। আরো রাশিয়ান, হয়তো। অপারেটর, সন্দেহ নেই। জড়িত, প্রশ্ন ছাড়াই। সম্ভবত, পৃথিবীর সেরা না আবার কমও না। তারা একজন আরেকজনের থেকে দূরে গিয়ে বসলো তবে তাদের দৃষ্টি টেবিলে একা বসে থাকা মেয়েটার উপর গিয়ে ত্রিভুজ তৈরি করলো। তারা চিন্তিত, অবিচল, আর একটু ভীতও। আমি লক্ষণ ধরতে পারলাম। অনেকবার আমি নিজের ভেতর এমনটা অনুভব করেছি। তারা কিছুক্ষণের মধ্যেই কাজে নেমে পড়বে। তাহলে দুই মাফিয়ার মাঝে কামড়াকামড়ি বেঁধেছে, একজন ড্রাইভার আর বডিগার্ড দিয়ে বাচ্চাকে রক্ষার চেষ্টা করছে, আরেকজন সবখানে লোক পাঠাচ্ছে তাকে ছিনিয়ে নিতে। তারপর আসবে মুক্তিপণ, অত্যাচার, দাবি, তারপর ভাগ্যের হাতবদল, অথবা ইউরেনিয়ামের ইজারা, মালিকানা তেলের, অথবা কয়লার, অথবা গ্যাসের।
   ব্যবসা, মস্কো স্টাইলে।
   তবে সাধারণত সফল ব্যবসা না। কিডন্যাপের রয়েছে হাজারো গতিবিধি, আর হাজারো উপায়ে ভন্ডুল হতে পারে সব। কিডন্যাপের শিকার হওয়া ব্যক্তির প্রত্যাশিত গড় আয়ুষ্কাল ছত্রিশ ঘন্টা। কেউ কেউ টিকে যায়, তবে বেশির ভাগই পারে না। কেউ কেউ সাথে সাথেই মারা যায়, প্রাথমিক আতঙ্কে।
   মেয়েটার টাকার বান্ডিল ওয়েট্রেসদের মৌমাছির মত আকর্ষণ করছে। আর ও কাউকে তাড়িয়ে দিচ্ছে না। একটার পর একটা বোতল শেষ করে যাচ্ছে। আর বিয়ার তো বিয়ারই। কিছুক্ষণ পরেই বারবার ওর ওয়াশরুম দর্শনে যেতে হবে। ওয়াশরুম করিডর দীর্ঘ আর অন্ধকার, আর এর শেষমাথায় রাস্তায় বেরোনোর দরজাও আছে।
   জমকালো আলোর প্রতিফলনে ওকে দেখছি যেখানে মিউজিক আমাকে জাপটে ধরে চিৎকার করছে। লোকদুটো ওকে দেখছে। ওর বডিগার্ড ওকে দেখছে। ও দেখছে গিটারিস্টকে। সে মনোযোগ রাখার চেষ্টা করছে, সুর আর কোরাসের পরিবর্তন হচ্ছে, তবে থেকে থেকে মাথা তুলে হাসছে সে, বিশেষ করে স্টেজে বাজানোর গর্বে, তবে দুবার সোজা মেয়েটার দিকে। প্রথম হাসিটা ছিলো লাজুক, আর দ্বিতীয়টা একটু চওড়া।
   মেয়েটা উঠতে গিয়ে টেবিলের পাটাতনের সাথে উরুতে গুঁতো খেল, তারপর সেটা এড়িয়ে পেছনের করিডরের দিকে হাঁটা শুরু করলো। আমি ওখানে আগেই চলে গেলাম। ব্যান্ডের শব্দ গর্জনের মত শোনাচ্ছে এখানে। মেয়েদের রুম অর্ধেক রাস্তাতে। ছেলেদের রুম একেবারে শেষ প্রান্তে। আমি দেয়ালের সাথে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মেয়েটাকে আমার দিকে আসতে দেখলাম। ওর পায়ে উঁচু হিল, পরনে আটঁসাঁট প্যান্ট, ছোট কিন্তু নিঁখুত পদক্ষেপ। এখনো মাতাল হয়নি। ও তো রাশিয়ান। রেস্টরুমের দরজায় ওর ফ্যাকাশে হাত রেখে ধাক্কা দিলো। ভেতরে চলে গেল ও।
   দশ সেকেন্ড যেতে না যেতেই লোকদুটো করিডরে পা রাখলো। ভেবেছিলাম তারা ওর জন্য বাইরে অপেক্ষা করবে। কিন্তু না। তারা আমার দিকে এমনভাবে তাকালো যেন আমি বিল্ডিঙের একটা পিলার। মেয়েদের ওয়াশরুমে ঢুকলো তারা। একজন একজন করে। ওদের পেছনে দরজা সশব্দে বন্ধ হলো।
   মিউজিক বেজে চলেছে।
   আমি তাদের পেছন পেছন ঢুকলাম। প্রতিদিনই নতুন কিছুর দেখা মিলে। আমি আগে কখনো মেয়েদের বাথরুম দেখিনি। ডান দিকে স্টল আর বায়ে সিঙ্ক। উজ্জ্বল আলো আর পারফিউমের ঘ্রাণ। মেয়েটা পেছনের দেয়ালের কাছে দাঁড়িয়ে। লোকদুট‌ো ফিরে আছে মেয়েটার দিকে। তাদের পেছনটা আমার দিকে। আমি বললাম, “হেই,” কিন্তু তারা শুনতে পেল না। আওয়াজ অনেক। আমি ওদের কনুই ধরলাম, দু হাতে দুজনের। তারা তড়িৎ ঘুরে দাঁড়ালো, লড়াই করতে প্রস্তুত, কিন্তু তারপর থামলো। তাদের স্বপ্নের ফ্রিজের থেকেও বিশাল আমি। কিছুক্ষণ স্থির দাঁড়িয়ে থাকলো তারা আর তারপর আমাকে ফেলে দরজা টেনে বাইরে বেরিয়ে গেল।
   মেয়েটা আমার দিকে এক মুহূর্ত এমন এক অনুভূতি নিয়ে তাকিয়ে রইলো যার অর্থ আমার জানা নেই। তারপর ওকে ওর কাজ সারতে দিয়ে আমি বাইরে বেরিয়ে এলাম। আমার জায়গায় গিয়ে বসলাম। লোকদুটো এরই মধ্যে নিজ স্থানে ফিরে গেছে। বডিগার্ড নিরাসক্ত। সে স্টেজের দিকে তাকিয়ে আছে। গান প্রায় শেষের দিকে। মেয়েটা এখনো বাথরুমে।
   মিউজিক থেমে গেল। লোকদুটো উঠে করিডর ধরে হাঁটা শুরু করলো। ঘরটা হঠাৎ সরব হয়ে উঠলো, লোকজন উঠে চলাচল শুরু করলো। আমি বডিগার্ডের দিকে এগিয়ে গিয়ে কাঁধে টোকা দিলাম। সে খেয়াল করলো না। একটুও নড়লো না সে, যতক্ষণ না গিটারিস্ট স্টেজ থেকে নামা শুরু করলো। তারপর সে উঠে দাঁড়ালো, দুজনের নড়াচড়ায় নিখুঁত ছন্দ। আমি বুঝতে পারলাম আমি ভুল করেছি। খামখেয়ালী মেয়ে না, খামখেয়ালী ছেলে। বাবা গিটার, অ্যাম্প কিনে ব্যাকিং মিউজিশিয়ান ভাড়া করে দিয়েছে। ছেলেটার স্বপ্ন। শোবার ঘর থেকে স্টেজে। তার ড্রাইভার ফুটপাতের পাশে গাড়িতে বসে, বডিগার্ডের চোখ তার উপর। বিপক্ষ দল দুই সদস্যের না, তিন সদস্যের। মায়াজালের দল। ছেলেটার স্বপ্ন। একটা ক্লাসিক প্রেমফাঁদ। বাথরুমে শেষ মিনিটের কৌশল নিয়ে শলা পরামর্শ, আর তারপর শুরু কাজ।
   আমি ঠেলে জায়গা করে পেছনের দরজা দিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে এলাম, বডিগার্ডের অনেক আগেই, ঠিক যখন মেয়েটা ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরলো আর অর্ধচক্র ঘুরে লোকদুটোর দিকে ঠেলতে শুরু করলো। আমি প্রথমজনকে সজোরে ঘুসি মারলাম আর দ্বিতীয়জনকে মারলাম তার থেকেও জোরে, মুখ থেকে রক্ত বেরিয়ে আমার শার্ট ভিজিয়ে দিলো। লোকদুটো সরে গেলো, মেয়েটা পালালো। আর তারপর বডিগার্ডের দেখা মিললো। আমি তার কাছ থেকে টিশার্ট নিয়ে নিলাম। রক্তের দাগ চোখে পড়তো। তারপর সামনের দরজা দিয়ে বাইরে বেরোলাম। ডানে মোড় নেওয়ার কথা সবাই ভাববে, তাই আমি বামে মোড় নিলাম। ব্লীকার আর লাফিয়েটের ছয় নম্বর ট্রেনে চড়ে বসলাম, উত্তর দিকে যাচ্ছি, দিনের শেষ ট্রেন। স্থির হয়ে বসে আশেপাশের চেহারা গুলোর দিকে নজর দিলাম। পুরোনো অভ্যাস সহজে মরে না।

]]>
<![CDATA[দ্য লং নাইট]]>kalpa21.github.io//the-long-night/6051319c1d36bc06c36022acSun, 07 Mar 2021 14:00:00 GMTদ্য লং নাইট

দ্য লং নাইট

   একসময়ের যুবক তৃতীয় আর্গো– এখন ছদ্দবেশ আর বয়সের ভারে জরাগ্রস্থ– পালিয়ে বেড়াচ্ছে। মনুষ্যত্ব, স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার, ‘সংখ্যাধিক্যের মতামত’, ‘আমাদের জীবনযাত্রা’, ‘চেনা সভ্যতার সংরক্ষণ’– এর নামে জীবনভর শোষণ করার পর তার ছেলে চতুর্থ আর্গো জনসাধারণকে ক্ষেপিয়ে তুলেছে, তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাকে। সে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে ছুটেছে, তবে তার শত্রুরা লেজ ধরেই ছিলো। জটিল ছদ্দবেশ আর প্লাস্টিক সার্জারি করে নিস্তার পাবার চেষ্টা করেছে সে, কিন্তু তার ছেলের গুপ্তচরেরা অতিবেগুনি, অবলোহিত ডাইমেনশন-র্যাপ কন্টাক্ট লেন্স দিয়ে তার মুখোশ ভেদ করে দেখতে পেত। সে এতই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলো যে একবার হাল ছেড়ে দিতে চেয়েছিলো– কিন্তু তারই করা নিয়মে মৃত্যুদন্ডের কথা ভাবলেই মুখ ফ্যাকাশে হয়ে আসে, যেটা এখন পবিত্রতম পন্থায় মৃত্যুদন্ড– ব্ল্যাক এলিক্সিরে সাত দিন ডুবিয়ে হত্যা।
   এখন তার স্পেসশিপ ভেঙে পড়ে আছে, মেরামতের অতীত। অন্ধকারে জমাট বাঁধা ধূসর বালুর উপর দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে সে। জিরো– তার দেওয়া গ্রহাণুটির নাম, কারণ এখানে কোন জনবসতি নেই, নেই কোন মূল্যবান ধাতু, এমনকি গ্রহাণুটি বন্ধ্যা কারণ সূর্যহীন, বিশাল জুপিটারের চিরস্থায়ী ছায়ায় এর অবস্থান। আর্গোর গন্তব্য ‘শেষ জাদুকর’ এর গুহার দিকে। বাকিসব জাদুকরের বলি হয়েছিলো আর্গোর ‘জাদুবিদ্যা বিরোধী পূণ্যাভিযান’ কর্মসূচিতে। কিন্তু গুজব প্রচলিত ছিলো এক জাদুকর জিরোতে পালিয়েছে। আর্গো মনে মনে প্রার্থনা করছে গুজবটি যেন সত্যি হয় আর শেষ জাদুকর যেন বেঁচে থাকে।
   সে ছিলো অশীতিপর বৃদ্ধ, রুগ্ন, নগ্ন, অনাহারে অর্ধমৃত, শুধু জাদুবলে বেঁচে ছিলো– তবে বেঁচে ছিলো। “ওহ, আপনি,” আর্গোকে স্বাগত জানিয়ে তার বলা বাক্য। “বলবোনা আমি অবাক হয়েছি। আপনার সাহায্য প্রয়োজন, অ্যা?”
   “জ্বি, জ্বি!” কর্কশ শব্দ করলো আর্গো। “আমাকে অভেদ্য ছদ্দবেশে মুড়ে দিন! দয়া করুন, আমাকে কৃপা করুন।”
   “সেটা কিরকম ছদ্দবেশ?” উচ্চস্বরে বললো শেষ জাদুকর।
   “আমি একটা ব্যাপারে নিশ্চিত,” বললো আর্গো, “কারণ জাদুকরেরা নির্যাতনের মুখে বলেছিলো যে সব মানুষেরাই ওয়্যার– সঠিক জাদুবলে মানুষকে ওয়্যারউলফ, ওয়্যারডগ, ওয়্যারবার্ড, যেকোনো ওয়্যার-প্রাণীতে বদলে ফেলা যায় যেমনটা তার কোষীয় গঠনে লুকানো থাকে। এমন প্রাণী, যা বনে আমি ধরা না পড়ে পালাতে পারবো!” “সেটা ঠিকই,” বললো শেষ জাদুকর। “কিন্তু ধরুণ আপনি একটা ওয়্যারবাগ হয়ে গেলেন, যেটা পায়ের তলায় পড়ে পিষে যেতে পারে? অথবা একটা ওয়্যারফিশ হয়ে গেলেন, যেটা এই গুহার মেঝেতে যন্ত্রণায় তড়পাতে তড়পাতে মারা যেতে পারে?”
   “তবু সেই মৃত্যুও,” কেঁপে উঠলো আর্গো, “আইনের মৃত্যদন্ড থেকে ভাল হবে।”
   “তা বেশ,” শ্রাগ করলো শেষ জাদুকর। সে হাত মেলে নাটকীয় অঙ্গভঙ্গি করলো আর উচ্চারণ করলো এক কাটখোট্টা শব্দ।
   এসব ছিলো ২৯০৪ সালের জুলাই এর ঘটনা। একশ বছর পর, ৩০০৪ এর জুলাই, আর্গো এখনো জিরোতে বেঁচে আছে। যদিও সঠিকভাবে বলতে গেলে তাকে সুখী বলা যাবে না। আদপে, সে এখন ব্ল্যাক এলিক্সিরে ডুবে শান্তির মৃত্যুর স্বপ্ন দেখে আর প্রার্থনা করে। আর্গো পরিণত হয়েছে সেই বিরল প্রাণীতে- ওয়্যারভ্যাম্পায়ার। ভ্যাম্পায়ারের একমাত্র খাবার রক্ত, আর যখন শেষ জাদুকরের শিরাও শুকিয়ে গেলো, শুরু হলো তার অনশন পর্ব। ক্ষুধা-তৃষ্ণা বিদ্রোহ করলো আর্গোর ভেতর। তারা এখনো বিদ্রোহ করে চলেছে, কোটিগুণ উন্মাদনায়, কেননা ভ্যাম্পায়াররা অমর। তাদের মৃত্যু কেবল হৃদপিন্ডে কাঠের কাঠি গেঁথে হতে পারে, কিন্তু জিরো বন্ধ্যা, কোন গাছপালা নেই। তাদের মৃত্যু কেবল রুপার বুলেটে হতে পারে, কিন্তু জিরো মূল্যবান ধাতু বঞ্চিত। তাদের মৃত্যু সূর্যরশ্মি তে হতে পারে, কিন্তু জুপিটারের ছায়ায় জিরো কখনো সূর্য দেখে না। এসব ছাড়াও আর্গো আরো এক কারণে জর্জরিত- ভ্যাম্পায়াররা শুধু দিনে ঘুমায় আর জিরো দিনশূন্য।

]]>
<![CDATA[লেট মি স্লীপ]]>kalpa21.github.io//let-me-sleep/6050e21b02e3c304a93048d5Sun, 28 Feb 2021 14:00:00 GMTলেট মি স্লীপ

লেট মি স্লীপ

   রাত। ভার্কা, ছোট্ট পরিচারিকা, বয়েস তের, শিশুটির দোলনা দোলাচ্ছে আর মৃদুস্বরে গুনগুন করছে–
   “ঘুমাও আমার মানিক চান,
   চানের জন্য বাঁধবো গান।”
   মূর্তিটির সামনে রাখা একটি কুপি সবুজ আলো ছড়াচ্ছে। ঘরের একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে দড়ি টানানো, ওতে ঝুলছে শিশুর কাপড়-চোপড় আর একটি কালো পাজামা। কুপির সবুজ আলো সিলিঙে গিয়ে ঠেকেছে, শিশুর কাপড় আর পাজামার ছায়া পড়েছে উনুনের উপর, পড়েছে দোলনায় আর ভার্কার শরীরে… শিখার কম্পনে থেকে থেকে সবুজ আলো-ছায়া হয়ে উঠছে জীবন্ত, করছে এদিক ওদিক ছুটোছুটি, মনে হচ্ছে যেন বাতাস বইছে। গুমোট পরিবেশ। বাঁধাকপি তরকারির ঘ্রাণ আসছে, আসছে জুতোর দোকানের ভ্যাপসা গন্ধ।
   শিশুটি কাঁদছে। অনন্তকাল ধরে ফুঁপিয়ে চলেছে, কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত। কিন্তু চেঁচিয়েই যাচ্ছে, ঈশ্বর জানে কখন থামবে। আর ভার্কার চোখে রাজ্যের ঘুম। ওর চোখগুলো আঠায় সেঁটা, মাথা আনত, ঘাড় যন্ত্রণাকাতর। ওর চোখের পাতা আর ঠোঁট অনড়, মুখ যেন শুকনো, কাঠ দিয়ে গড়া, মাথা যেন ছোট হয়ে হয়ে সুঁইয়ের মাথায় পরিণত হয়েছে।
   “ঘুমাও আমার মানিক চান,
   চানের জন্য বাঁধবো গান।”
   উনুন থেকে একটি ঝিঁঝিঁপোকা ডাকছে। দরজা গলে পাশের ঘর থেকে আসছে মালিক, অনাড়ি আফানসির নাক ডাকার শব্দ… দোলনার সকাতরে ক্যাঁচক্যাঁচ, ভার্কার গুনগুন– সবে মিলে পরিণত হচ্ছে প্রাণ জুরানো সঙ্গীতে, শুনতে মধুর,  যখন কেউ তা বিছানায় শুয়ে উপভোগ করবে। এখন এই সঙ্গীত শুধুই বিরক্তিকর আর কষ্টকর, কেননা এসব ওর ঘুমকে আরো উসকে দিচ্ছে, কিন্তু ঘুমানোর উপায় নেই। যদি ভার্কা – ঈশ্বর মাফ করো – ঘুমিয়ে যায়, ওর মালিক আর মালকিনের হাতে বেধড়ক মার খাবে।
   কুপি কেঁপে উঠলো। সবুজ আলো-ছায়া হয়ে উঠলো জীবন্ত, ভর করলো ভার্কার স্থির, অর্ধ-নিমীলিত চোখের উপর, ভর করলো ধোঁয়াটে দৃষ্টির নিদ্রাকাতর মস্তিষ্কে। ও দেখলো কালো মেঘেরা একে অপরকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে, চিৎকার করছে শিশুর মত। কিন্তু বাতাস বইতেই ওগুলো উধাও হলো আর ভার্কার চোখে ভেসে উঠলো এক কর্দমাক্ত সড়ক। সড়কজুড়ে সার বেঁধে গাড়ি চলছে, চলছে পেছনের পকেটে মানিব্যাগওয়ালা লোকেরা আর তাদের ছায়াগুলো সঙ্গ দিচ্ছে সামনে পেছনে হেলতে দুলতে। শুষ্ক কুয়াশা ভেদ করে ও দেখতে পাচ্ছে সড়কের দু’ধার ঘেষা অরণ্য। সহসাই, মানিব্যাগওয়ালা লোকগুলো কাঁদায় লেপ্টে থাকা সড়কে শুয়ে পড়লো। “এসব কেন?” ভার্কা জানতে চাইলো। “ঘুমাতে, ঘুমাতে!” তারা জবাব দিলো। আর তারা চলে গেলো মিষ্টি ঘুমে, ঘোর নিদ্রায়। ওদিকে দোয়েল আর কাকেরা টেলিগ্রাফের তারে বসে চিৎকার জুড়লো শিশুর মত, তাদের ঘুম ভাঙাতে।
   “ঘুমাও আমার মানিক চান, চানের জন্য বাঁধবো গান,” ভার্কা বিড়বিড় করলো। এবার ও নিজেকে গুমোট, অন্ধকার কুঁড়েতে আবিষ্কার করলো।‌‌‌‌
   ওর মৃত পিতা, ইয়েফিম স্টেপানোভ, মেঝেতে এপাশ থেকে ওপাশে গড়াগড়ি করছে। ও তাকে দেখতে পাচ্ছে না, তবে গোঙানি আর অসহ্য যন্ত্রণায় মেঝেতে তড়পানোর শব্দ কানে আসছে। “নাড়িভুড়ি বেরিয়ে আসছে,” সে বলতে চাইলো। কিন্তু যন্ত্রণা এতটাই তীব্র যে কোন শব্দ উচ্চারিত হলো না। শ্বাস চেপে শুধু ঢোল পেটানোর মত আওয়াজ বেরোলো–
   “বু – বু – বু – বু…”‌‌‌‌
   ওর মা, পেলাগিয়া, মালিকের বাড়িতে ছুটলো, জানাতে যে ইয়েফিম মরণাপন্ন। অনেকক্ষণ হয়েছে সে গিয়েছে, ফিরে আসার কথা। ভার্কা উনুনের পাশে জেগে রইলো, কানে আসছে ওর বাবার “বু – বু – বু।” আর তারপর ও শুনতে পেলো কুঁড়ের দিকে কেউ ছুটে আসছে। শহরের নবীন ডাক্তার, বড় এক বাড়িতে রোগী দেখার সময় তাকে ডেকে আনা হয়েছে। ডাক্তার ঘরের ভেতরে প্রবেশ করলো, অন্ধকারে তাকে দেখা যাচ্ছে না, তবে শোনা যাচ্ছে তার কাশি আর দরজা হাতড়ানো।‌‌‌‌
   “বাতি জ্বালুন,” বললো সে।‌‌‌‌
   “বু – বু – বু,” ইয়েফিমের জবাব।‌‌‌‌
   পেলাগিয়া উনুনের দিকে ছুটে এসে ম্যাচ রাখার ভাঙা হাড়িটা খুঁজতে লাগলো। নিশব্দে মিনিটখানেক পার হলেো। ডাক্তার পকেট হাতড়ে ম্যাচ জ্বাললো।
   “এক মিনিট, স্যার, এক মিনিট,” পেলাগিয়া বললো। কুঁড়ে থেকে ছুটে বের হলো সে, খানিক বাদে ফিরে এলো এক টুকরা মোম নিয়ে।‌‌
   ইয়েফিমের গালে গোলাপি আভা, চোখ জ্বলজ্বলে, তার চাহনিতে অদ্ভুত প্রখরতা, মনে হচ্ছে তার দৃষ্টি যেন ডাক্তার আর কুঁড়ে ভেদ করো যাচ্ছে।
   “এই যে, কি করছেন? কি ভাবছেন?” তার পাশে উবু হয়ে ডাক্তার বললো। “আহা, অনেক কষ্ট হচ্ছে?”
   “জ্বি? মারা যাচ্ছি, সাহেব। আমার সময় ফুরিয়ে এসেছে... এ দুনিয়ায় আর থাকছি না।”‌‌‌‌
   “বাজে কথা বলবেন না! আমরা আপনাকে সারিয়ে তুলবো!”
   “যেমনটা বলেন, সাহেব। আপনাকে ধন্যবাদ। শুধু যদি আমরা বুঝতাম... মরণ এসে গেছে, ঐ যে।”
   ডাক্তার মিনিট পনের ইয়েফিমকে নিয়ে পড়ে রইলো, তারপর উঠে বললো–‌‌
   “আমি কিছু করতে পারছি না। আপনাকে অবশ্যই হাসপাতালে যেতে হবে। ওখানে ওরা আপনার চিকিৎসা করবে। এখনই চলে যান... আপনাকে যেতেই হবে! দেরি হলে, হাসপাতালের সবাই ঘুমিয়ে পড়বে, তবে সে ব্যপার না, আমি চিরকুট লিখে দিবো। শুনছেন?”
   “মহানুভব, কিন্তু কিভাবে নিয়ে যাবো ওখানে?” পেলাগিয়া জিজ্ঞেস করলো। “আমাদের যে কোন ঘোড়া নেই।”
   “কিছু মনে করবেন না। আমি আপনার মালিককে বলে দিবো, উনি ঘোড়া ধার দিবেন।”
   ডাক্তার চলে গেলো, মোমবাতিও ফুরিয়ে গেলো, আবার ফিরে এলো সেই "বুু – বু – বু" শব্দ। আধঘন্টা পর কেউ কুঁড়ের দিকে এলো। ইয়েফিমকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য এক ঘোড়ার গাড়ি পাঠিয়েছে। সে প্রস্তুত হয়ে চললো...
   কিন্তু এখন পরিষ্কার সকাল। পেলাগিয়া বাড়ি নেই; সে হাসপাতালে ইয়েফিমের খবর নিতে গিয়েছে। কোথাও এক শিশু কাঁদছে, আর ভার্কা শুনতে পেল কেউ ওর সুরে গাইছে–
   “ঘুমাও আমার মানিক চান,
    চানের জন্য বাঁধবো গান।”
   পেলাগিয়া ফিরে এলো, বুকে ক্রস এঁকে কম্পিত কন্ঠে বললো–
   “ওরা রাত পর্যন্ত উনাকে আটকে রেখেছিলো, কিন্তু ভোরে উনি আত্মা ঈশ্বরের নিকট সমর্পণ করেছেন... অনন্ত শান্তির স্বর্গরাজ্যে চলে গেছেন... ওরা বললো দেরিতে নেওয়া হয়েছে... আরো আগে যাওয়া উচিৎ ছিলো...”
   ভার্কা রাস্তায় বেরিয়ে কান্না করলো, কিন্তু হঠাৎ কেউ ওর মাথার পেছনে এত জোরে আঘাত করলো যে ও বার্চ কাঠের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়লো। চোখ মেলে তাকালো ও, ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে ওর মালিক, জুতোর কারিগর।‌‌
   “তুই কোন কাজের, ধামড়া মাগী?” তিনি বললেন। “বাবু কাঁদছে, আর তুই ঘুমাচ্ছিস!”
   সে ওর কানের পেছনে কষিয়ে চড় মারলো, আর ও মাথা ঝাঁকালো, দোলনা দোলালো, গুনগুন করে ওর গান গাইলো। সবুজ আলো আর শিশুর কাপড়, পাজামার ছায়া উপর-নিচ দুলে উঠলো, মাথা দোলালো ওর দিকে, আর অচিরেই আবার ওর মস্তিষ্কের দখল নিলো। আবার ও দেখতে পেল সেই কর্দমাক্ত সড়ক। সড়কে শুয়ে আছে পেছনের পকেটে মানিব্যাগওয়ালা ঘুমন্ত লোকরা আর তাদের ছায়া। তাদের দিকে তাকিয়ে ভার্কার তীব্র সাধ জাগলো ঘুমের; ও সানন্দে শুয়ে পড়তো, কিন্তু ওর মা ওর পাশে হাঁটছে, তাড়া আছে তার। ঘটনা বুঝতে ওরা একসঙ্গে শহরের দিকে ছুটছে।‌‌
   “করুণা করুন, ঈশ্বরের ওয়াস্তে!” সামনে চলা লোকেদের কাছে ওর মা ভিক্ষা চাইলো। “আমাদের স্বর্গীয় কৃপা করুণ, মহানুভব ভদ্রলোকেরা!”
   “বাবুকে এদিকে দে!” এক পরিচিত কণ্ঠস্বর বলে উঠলো। “বাবুকে এদিকে দে!” একই কণ্ঠস্বর পুনরাবৃত্তি করলো, এবার রূঢ় আর রাগত স্বরে। “তুই ঘুমাচ্ছিস, হতচ্ছাড়া মেয়ে?”
   ভার্কা লাফিয়ে উঠলো, কি ব্যাপার বুঝতে এদিক ওদিক তাকালো- কোথাও সড়ক নেই, নেই পেলাগিয়া, নেই লোকারণ্য,  শুধুই ওর মালকিন, শিশুটিকে খাওয়াতে এসেছে, আর দাঁড়িয়ে আছে ঘরের মাঝে। যখন এই স্থূল, চওড়া কাঁধের মহিলা শিশুকে শান্ত করে খাওয়াচ্ছিলো, ভার্কা দাঁড়িয়ে দেখছিলো তাকে আর অপেক্ষা করছিলো শেষ হবার। আর জানালার বাইরে আকাশ নীল হতে শুরু করলো, সবুজ আলো-ছায়া হতে থাকলো বিবর্ণ, ভোর হয়ে আসছে।‌‌
   “ধর ওকে,” ওর মালকিন বলল‌ো। বুকের উপর শেমিজের বোতাম লাগাতে লাগাতে বললো, “ও শুধু কান্না করছে, কেউ নিশ্চয়ই জাদু করেছে।”
   ভার্কা শিশুটিকে নিলো, দোলনায় রেখে আবার দোলানো শুরু করলো। সবুজ আলো-ছায়া ধীরে ধীরে অদৃশ্য হলো, আর এখন কারো সাধ্য নেই ওর চোখ আর মস্তিষ্কে ভর করার। কিন্তু ওর চোখে আগের মতই ঘুম। ভয়ানক ঘুম! ভার্কা দোলনার একপাশে মাথা রাখলো, ঘুম তাড়াতে গা ঝাড়া দিলো, তবুও ওর চোখ সেঁটে রইলো আঠায়, মাথা হয়ে রইলো ভারী।
   “ভার্কা, চুলা জ্বালা!” দরজা গলে মালিকের কণ্ঠস্বর শুনতে পেল ও।‌‌
   উঠে কাজ করার সময় হয়েছে। ভার্কা দোলনা ছেড়ে দৌড়ে গুদাম থেকে জ্বালানি কাঠ আনতে চললো। ও খুুশি। যখন কেউ হাঁটাচলা, দৌড়াদৌড়ি করে, তার চোখে ঘুম আসেনা যেমনটা আসে বসে থাকলে। ও কাঠ নিয়ে ফিরলো, উনুন জ্বাললো, আর টের পেল ওর কাঠের চেহারা আবার কোমল হচ্ছে, আর ওর ভাবনাচিন্তা পরিষ্কার হচ্ছে।
   “ভার্কা, চা বসিয়ে দে!” চেঁচিয়ে বলল‌ো ওর মালকিন।‌‌
   ভার্কা কাঠ ফাঁড়লো, কিন্তু ওতে আগুন দিয়ে চা বসাতেই নতুন আদেশ এলো–
   “ভার্কা, মনিবের জুতা মুছে দে!”
   ও মেঝেতে বসে জুতো মুছলো, আর ভাবলো এই জুতোর বিশাল ফুটোতে মাথা গলিয়ে একটু ঘুমিয়ে নিতে পারলে কতই না ভাল হতো... আর তারপর সহসাই জুতো বড় হয়ে গেলো, গিলে নিলো ওকে, পুরু হয়ে গেল ঘর। ভার্কার হাত থেকে জুতোর ব্রাশ পড়ে গেল, কিন্ত ও মাথা ঝাঁকালো, চোখ বড় করে তাকালো, সবকিছু দেখার চেষ্টা করলো যাতে ওগুলো যেন বড় হয়ে চোখের সামনে নড়তে না পারে।‌‌
   “ভার্কা, সিঁড়ি ধুয়ে ফেল; লজ্জাই লাগে যখন খদ্দেররা ওরকম দেখে!”
   ভার্কা সিঁড়ি পরিষ্কার করলো, ঘর ঝাড়ু দিয়ে মুছলো, তারপর আরেকবার উনুন জ্বালিয়ে ছুটলো দোকানে। অনেক কাজ পড়ে আছে- এক মুহূর্ত জিরোনোর সময় নেই।
   কিন্তু কোন কিছুই রান্নাঘরে একনাগাড়ে দাঁড়িয়ে আলুর খোঁসা ছাড়ানোর মত শক্ত না। ওর মাথা টেবিলে ঝুঁকে পড়ে, চোখের সামনে আলু নাচানাচি করে, হাত থেকে ছুরি পিছলে পড়ে। তখন ওর মোটা, রাগী মালকিন হাতা গুটিয়ে এত উচ্চস্বরে কথা বলতে থাকে যে ভার্কার কানে বাজতে থাকে। এও কষ্টকর– রাতের খাবারের অপেক্ষা, ধোয়া-মোছা, সেলাই করা। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় সব বাদ দিয়ে মেঝেতে শুয়ে পড়তে, ঘুমিয়ে যেতে।
   দিন ফুরোলো। ও ওর কপাল স্পর্শ করলো, মনে হচ্চে যেন কাঠের, একটু হাসলো, যদিও জানেনা কেন। আবছা সন্ধ্যা ওর আধখোলা চোখে চুমু দিলো, আর দিল শীঘ্রই গভীর নিদ্রার প্রতিশ্রুতি। সন্ধ্যায় অতিথিরা এলো।
   “ভার্কা, চা বসিয়ে দে!” মালকিন চেঁচিয়ে বললো। চায়ের আসর ছোট। অতিথিরা তাদের ইচ্ছেমত চা পানের আগে ওর পাঁচবার গরম করে দিতে হলো। চা শেষে পুরো এক ঘন্টা ভার্কা একই স্থানে দাঁড়িয়ে রইলো, তাকিয়ে রইলো অতিথিদের দিকে, আদেশের অপেক্ষায়।
   “ভার্কা, দৌড়ে গিয়ে তিন বোতল বিয়ার কিনে নিয়ে আয়!”
   ও ছোটা শুরু করলো, ঘুম তাড়াতে যত দ্রুত পারে দৌড়াতে থাকলো।
   “ভার্কা, একটু ভদকা দিয়ে যা! ভার্কা, বোতলের ছিপি কোথায়? হারিং পরিষ্কার কর!”
   তবে এখন, অবশেষে, অতিথিরা চলে গেছে। আলো নিভিয়ে মালিক আর মালকিন বিছানায় চলে গেছে।
   “ভার্কা, বাচ্চার দোলনা দোলা!” ও শেষ আদেশ শুনতে পেল।
   উনুন থেকে আবার ঝিঁঝি ডাকছে। সবুজ আলো আবার সিলিঙে ঠেকেছে, আবার শিশুর কাপড় আর পাজামার ছায়া ভার্কাকে চোখ টিপে, ওর মস্তিষ্ক মেঘাচ্ছন্ন করে পড়েছে ওর অর্ধ-নিমীলিত চোখের উপর।
   “ঘুমাও আমার মানিক চান,” ভার্কা বিড়বিড় করলো, “চানের জন্য বাঁধবো গান।”
   আর শিশুটি চিৎকার করছে, ক্লান্ত চিৎকারে। ভার্কা আবার দেখতে পেল সেই কর্দমাক্ত সড়ক, মানিব্যাগওয়ালা লোকদের, ওর মা পেলাগিয়াকে, ওর বাবা ইয়েফিমকে। ও সব বুঝতে পারছে, সবাইকে চিনতে পারছেও। কিন্তু ওর নির্ঘুম চোখ দিয়ে বুঝতে পারছে না সে শক্তিকে যে বেঁধে রেখেছে ওকে, ওর হাত-পা, পিষে ফেলছে ওকে, আটকে দিচ্ছে ওর বেঁচে থাকা। ও চারপাশে তাকালো, খুঁজলো সেই শক্তিকে যার থেকে ও নিস্তার পেতে পারে, কিন্তু খুঁজে পেল না। অবশেষে, ক্লান্তির শিখরে, ও সর্বোচ্চ চেষ্টা করলো, চোখ পিটপিট করে তাকালো কম্পিত সবুজ আলোতে, আর শুনলো চিৎকার, পেয়ে গেল সেই শত্রুকে যে ওকে বাঁচতে দিচ্ছে না।
   শিশুটিই সেই শত্রু।
   ও হাসলো। ওর কাছে আজব লাগলো যে এই সামান্য ব্যাপার ও ধরতে পারে নি। হাসলো সবুজ আলো- ছায়া, আর ঝিঁঝিঁ পোকারাও, বিস্ময়ে। বিভ্রম ভর করলো ভার্কার উপর। টুল থেকে উঠে দাঁড়ালো ও। বিস্তৃত হাসিমুখ আর নিষ্পলক চোখে ঘর ধরে এগোলো ও। ওর হাত আর পা বেঁধে রাখা শিশুটি থেকে নিস্তার পাবে ভেবেই ওর  খুশি আর সুড়সুড়ি লাগলো... হত্যা করো শিশুটিকে, আর তারপর ঘুম, ঘুম, ঘুম...
   হাসতে হাসতে, চোখ পিটপিট করে, সবুজ আলো পানে আঙুল মটকে ভার্কা শিশুটির দিকে এগিয়ে গেল, আর তারপর উবু হলো শিশুটির উপর। শিশুটির শ্বাসরোধ করে ও জলদি মেঝেতে শুয়ে পড়লো, পরমানন্দে হেসে উঠলো, এখন ঘুমাতে পারবে। এক মুহূর্তে গভীর নিদ্রায় তলিয়ে গেল ও,  ঠিক যেন মৃতমানুষ।

]]>
<![CDATA[হিলস লাইক হোয়াইট এলিফ্যান্টস]]>kalpa21.github.io//hills-like-white-elephants/604f91ec7beaed0cb45b5a74Sun, 21 Feb 2021 14:00:00 GMTহিলস লাইক হোয়াইট এলিফ্যান্টস

হিলস লাইক হোয়াইট এলিফ্যান্টস

   এব্রো’র উপত্যকা জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে সুবিশাল আর শ্বেতশুভ্র পর্বতমালা। এদিকটা গাছপালাহীন, ছায়ার কোন অস্তিত্ব নেই। স্টেশনটি দু’রাস্তার মাঝে রোদ পোহাচ্ছে। ওতে ঠেস দিয়ে, দালানের উষ্ণ ছায়ায় উঁকি দিচ্ছে একটি ‘বার’। মাছি তাড়াতে খোলা দরজায় পর্দা ঝুলছে, বাঁশের চাতাইয়ে বোনা। আমেরিকান লোকটি আর তার সাথের মেয়েটি দালানের বাইরে ছায়ায় পাতে রাখা টেবিলে বসেছে। উত্তপ্ত দিন। বার্সেলোনা ফেলে আসা ট্রেনটি মিনিট চল্লিশের মাঝেই পৌঁছে যাবে। দু’মিনিট থেমে আবার মাদ্রিদের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে।
   “আমরা কোনটা নিবো?” মেয়েটি জিজ্ঞেস করলো। সে হ্যাট খুলে টেবিলের উপর রেখেছে।
   “আজ অনেক গরম,” লোকটি বললো।
   “চলো, বিয়ার নিই।”
   “দোস কারভেজাস,” লোকটা পর্দার দিকে ফিরে হাঁকলো।
   “বড়?” দরজা থেকে এক মহিলা জিজ্ঞেস করলো।
   “জ্বি, দুটো বড়।”
   মহিলাটি দুটো বিয়ারপূর্ণ গ্লাস আর চামড়া মোড়ানো প্যাড রেখে দুজনের দিকে ফিরলো। মেয়েটির দৃষ্টি সেঁটে আছে দূর পর্বত-রেখায়। সূর্যালোকে পাহাড়গুলোকে দেখাচ্ছে শ্বেতশুভ্র। অঞ্চলটি ধূসর আর রুক্ষ।
   “ওদেরকে শ্বেতহস্তি মনে হচ্ছে,” বললো মেয়েটি।
   “আমি কখনো দেখিনি,” লোকটি বিয়ারে চুমুক দিলো।
   “না, তুমি দেখবেও না।”
   “হয়তো দেখবো,” লোকটি বললো। “আমি দেখবো না বললেই কিছু প্রমাণ হয় না।”
   মেয়েটি বাঁশের পর্দার দিকে তাকালো। “ওরা এটাতে কিছু এঁকে রেখেছে,” সে বললো। “কি লেখা এতে?”
   “আনিস দেল তোরো। একধরণের মদ।”
   “আমরা কি চেখে দেখতে পারি?”
   লোকটি পর্দার ভেতরে ডাকলো “শুনুন”। মহিলাটি বার থেকে বেরিয়ে এলো।
   “ফোর রিয়ালস।”
   “দুটো আনিস দেল তোরো দিবেন।”
   “জল মিশিয়ে দিবো?”
   “তুমি কি এতে জল চাও”
   “আমি জানিনা,” বললো মেয়েটি। “জলের সাথে ভালো লাগবে?”
   “মোটামুটি।”
   “তুমি জল মেশানো চাও?” মেয়েটি জিজ্ঞেস করলো।
   “হ্যাঁ। জল সমেত।”
   “এটা মিষ্টি স্বাদের,” গ্লাস নামিয়ে মেয়েটি বললো।
   “এরকমই সব কিছু।”
   “হ্যাঁ,” বললো মেয়েটি। “সবকিছুই মিষ্টি লাগে। বিশেষ করে যেসবের জন্য তুমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করো, যেমন মদ।”
   “আহা, ছাড়ো তো।”
   “তুমিই শুরু করেছো,” মেয়েটি বললো। “আমি খুশিই ছিলাম। ভাল সময় কাটছিলো।”
   “আচ্ছা, আবার চেষ্টা করো, ভাল সময় কাটাও।”
   “ঠিক আছে। আমি সে চেষ্টাই করছিলাম। বললাম, পাহাড়গুলোকে শ্বেতহস্তির মত দেখাচ্ছে। ওগুলো উজ্জ্বল দেখাচ্ছিলো না?”
   “দেখাচ্ছিলো।”
   “আমি এই নতুন মদের স্বাদ নিতে চেয়েছি। আমরা তো এসবই করি, না? – নতুনকে দেখি আর তারপর আস্বাদন গ্রহণ করি।”
   “হয়তো।”
   মেয়েটি পাহাড়সারির দিকে তাকালো।
   “পাহাড়গুলো সুন্দর,” সে বললো। “ওগুলো দেখতে সত্যি সত্যি শ্বেতহস্তির মত না। আমি শুধু গাছের ফাঁকে ওগুলোর গায়ের রঙকে বোঝাচ্ছিলাম।”
   “আমরা কি আরো একটা নিবো?”
   “ঠিক আছ।”
   টেবিলের অপরদিকে বাঁশের পর্দায় হালকা দোলা দিয়ে বাতাস বয়ে গেল।
   “বিয়ারগুলো সতেজ আর শীতল,” লোকটি বললো।
   “চমৎকার,” বললো মেয়েটি।
   “এটা অতিশয় সাধারণ অপারেশন, জিগ,” বললো লোকটি। “আসলে কোন অপারেশনই না।”
   মেয়েটি মাটির দিকে তাকালো যেখানে টেবিল পা মেলে দাঁড়িয়ে আছে।
   “আমি জানি তুমি কিছু মনে করবে না, জিগ। এটা আসলে কিছুই না। শুধু বাতাস ভেতরে ঢুকতে দেওয়া।”
   মেয়েটি কিছু বললো না।
   “আমি তোমার সাথে যাবো আর সবসময় তোমার পাশেই থাকবো। ওরা শুধু বাতাস ভেতরে ঢুকতে দিবে, তারপর বাকি সব স্বাভাবিক।”
   “তারপর আমরা কি করবো?”
   “তরপর আমরা ভাল থাকবো। আগে যেরকম ছিলাম।”
   “এমনটা কেন ভাবছো?”
   “একমাত্র ওতেই আমাদের অশান্তি। ওতেই আমরা অসুখী।”
   মেয়েটি বাঁশের পর্দার দিকে ফিরলো। হাত প্রসারিত করে দুটো চাতাই ধরলো।
   “আর তুমি মনে করো তারপর আমরা ভাল থাকবো, সুখী থাকবো।”
   “আমি জানি। তুমি ভয় পেওনা। আমি এমন অনেককে চিনি যারা করেছে।”
   “আমিও,” মেয়েটি বললো। “আর তারপর ওরা সবাই খুব সুখী ছিলো।”
   “শোনো,” লোকটি বললো, “যদি না চাও তাহলে করতে হবে না। তবে আমি জানি খুব সহজ ব্যাপার এটা।”
   “আর তুমি সত্যিই চাও?”
   “আমার মতে এটা আমাদের জন্য ভাল হবে। কিন্তু আমি চাইনা তুমি অনিচ্ছায় করো।”
   “আর আমি যদি করি তাহলে তুমি খুশি হবে? সবকিছু আগের মত হয়ে যাবে? আমাকে আগের মত ভালবাসবে?”
   “আমি এখনও তোমাকে ভালবাসি। আমি তোমাকে ভালবাসি তুমি জানো।”
   “জানি। কিন্তু যদি করি, তুমি আবার ঠিক হয়ে যাবে? যদি শ্বেতহস্তীর মত কিছু বলি, পছন্দ করবে?”
   “অবশ্যই। আমি এখনও পছন্দ করি কিন্তু এখন এ নিয়ে ভাবতে পারছি না। তুমি তো জানোই দুশ্চিন্তায় আমি কেমন হয়ে যাই।”
   “যদি এটা করি তবে আর দুশ্চিন্তা করবে না?”
   “এ নিয়ে আর দুশ্চিন্তা করবো না। আমি জানি খুব সাধারণ ব্যাপ্যার এটা।”
   “তাহলে আমি করবো। কারণ আমি নিজেকে নিয়ে ভাবিনা।”
   “কি বলতে চাচ্ছো?”
   “আমি নিজেকে নিয়ে ভাবিনা।”
   “আমি তোমাকে নিয়ে ভাবি।”
   “ও হ্যাঁ। কিন্তুু আমি নিজেকে নিয়ে ভাবি না। এবং আমি করবো এটা, আর তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে।”
   “এরকম মনে করলে আমি চাইনা তুমি করো।”
   মেয়েটি উঠে স্টেশনের অপরদিকে এগিয়ে গেল। এব্রো’র পাড় ঘেঁষে ফসলের মাঠ আর গাছের সারি চলে গেছে। বহুদূরে, নদী মিশেছে পাহাড়ে। শস্যক্ষেতে ভেসে বেড়াচ্ছে মেঘের ছায়া। মেয়েটা গাছের ফাঁক গলে নদীর দিকে তাকালো।
   “আর এ সবই আমাদের হতে পারতো,” সে বললো। “হতে পারতো সবকিছু। প্রতিনিয়ত দূরে ঠেলে দিচ্ছি।”
   “কি বললো?”
   “বললাম, সবই আমাদের হতে পারতো।”
   “এখনও সব হতে পারে।”
   “না, পারে না।”
   “আমরা সবখানে যেতে পারি।”
   “না পারি না। এসব আর আমাদের নেই।”
   “এসব আমাদের।”
   “না। যখন ওরা সব নিয়ে নিবে, তুমি কিছু ফিরে পাবে না।”
   “কিন্তু ওরা নিয়ে নেয়নি।”
   “অপেক্ষা করো, দেখতে পাবে।”
   “ছায়ায় এসো,” লোকটি বললো। “তোমার এভাবে ভাবা উচিৎ না।”
   “আমি কোনভাবে ভাবি না,” বললো মেয়েটি। “আমি জানি।”
   “আমি চাইনা তুমি অনিচ্ছায় কিছুু করো –”
   “আমার খারাপ হলেও কিছু না,” মেয়েটি বললো। “আমি জানি। আমরা কি আরেকটা বিয়ার নিতে পারি?”
   “ঠিক আছে। কিন্তু তোমার বুঝতে হবে – –”
   “আমি বুঝি,” মেয়েটি বললো। “তুমি কি এসব চিন্তা বন্ধ করবে?”
   তারা টেবিলে বসলো। মেয়েটির দৃষ্টি উপত্যকার রুক্ষ পাহাড়ের দিকে। লোকটি মেয়েটির দিকে তাকালো, তারপর টেবিলের দিকে।
   “তেমার বুঝতে হবে,” সে বললো। “যে আমি চাই না তুমি অনিচ্ছায় করো। যদি এটা তোমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয় তবে আমি দায়ভার নিতে রাজি।”
   “এটা তোমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ না? আমরা এর শেষটা জানতে পারতাম।”
   “অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমি তোমাকে ছাড়া আর কাউকে চাই না। আমাদের মাঝে কাউকে চাই না। আর জানি, এটা খুব সহজ ব্যাপার।”
   “হ্যাঁ, তুমি জানো এটা খুব সহজ ব্যাপার।”
   “তোমার জন্য বলা সহজ। তবে আমি জানি।”
   “তুমি কি আমার জন্য় একটা কাজ করবে?”
   “তোমার জন্য সব করবো।”
   “তুমি কি দয়া করে, দয়া করে, দয়া করে, দয়া করে, দয়া করে, দয়া করে, দয়া করে, চুপ করবে?”
   লোকটি কিছু বললো না। স্টেশনের দেয়ালে ঠেস দিয়ে রাখা ব্যাগের দিকে তাকালো। একসাথে রাত কাটানো হোটেলগুলোর সব রসিদ সেখানে আছে।
   “কিন্তু আমি তোমাকে জোর করতে চাই না,” বললো লোকটি। “আমি এসব নিয়ে ভাবি না।”
   “আমি চিৎকার করবো,” মেয়েটি বললো।
   মহিলাটি দুটো বিয়ারের গ্লাস হাতে নিয়ে পর্দার বাইরে এলো। ভেজা প্যাডের উপরে রাখলো ওগুলো। “পাঁচ মিনিটের মাঝে ট্রেন চলে আসবে,” বললো সে।
   “উনি কি বললেন?” মেয়েটি জিজ্ঞেস করলো।
   “পাঁচ মিনিটের মাঝে ট্রেন চলে আসবে।”
   মেয়েটি একটা লম্বা হাসি উপহার দিয়ে মহিলাকে ধন্যবাদ জানলো।
   “আমি বরং ব্যাগগুলো স্টেশনের ওপাশে রেখে আসি,” লোকটি বললো। মেয়টি লোকটির দিকে তাকিয়ে হাসলো
   “ঠিক আছে। তাহলে, তুমি ফিরে এলে আমরা বিয়ার শেষ করবো।
   লোকটি দুটো ভারি ব্যাগ তুলে স্টেশনের অপরদিকে রাস্তার পাশে বয়ে আনলো। সরু রাস্তা পানে তাকলো, কিন্তু ট্রেনের হদিস নেই। ফিরে এসে বারের ভেতরে পা দিলো লোকটি। ট্রেনের জন্য অপেক্ষারত লোকজন মদ পান করছে। একটা আনিস দেল তোরো নিয়ে লোকজনদের দিকে মনোযোগ দিলো সে। সবাই অধীর আগ্রহে ট্রেনের জন্য বসে আছে। লোকটি বাঁশের পর্দা সরিয়ে বাইরে এলো। মেয়েটি টেবিল থেকে একটু হাসলো লোকটির দিকে।
   “ভাল বোধ করছো?” লোকটি জিজ্ঞেস করলো।
   “আমি ঠিক আছি,” বললো মেয়েটি। “কোন সমস্যা নেই আমার। আমি ঠিক আছি।”

]]>